কে. এম. সাখাওয়াত হোসেন :
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক আব্দুল খালেক এমপি’র ৪৫তম মৃত্যু বার্ষিকী নেত্রকোণা ও আটপাড়া উপজেলায় নানা কর্মসূচির মধ্যদিয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়েছে।
সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১১টায় নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলা আওয়ামীলীগ অফিস ও মুক্তিযোদ্ধা কার্যালয়ে মরহুমের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। পরে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আয়োজনে আটপাড়া মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনে মরহুম আব্দুল খালেকের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনকে স্মরণ করে এক স্মরণ সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মিলাদ মাহফিল দোয়া ও স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজা সুলতানার সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, মরহুম আব্দুল খালেকের দ্বিতীয় পুত্র আটপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও আটপাড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি খাইরুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস রানা আঞ্জু, উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান খান নন্দন, আটপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ আলী হোসেন, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার তৈবুর রহমান সহ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের মুক্তিযোদ্ধাবৃন্দ।
১৯৭৫ সালের এইদিনে (২৪ ফেব্রুয়ারি) ভোর রাতে আততায়ীর গুলিতে তিনি নিহত হন। ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে নেত্রকোনার মোক্তারপাড়া মাঠে এক্সিভিশন উদ্ভোধন শেষে তিনি তাঁর নিজ বাসায় ফিরছিলেন। বাসার একেবারে নিকটে এলে আততায়ীরা (রাত ১১ টা ৫৭ মিনিটের দিকে) তাঁকে লক্ষ্য করে তিন দফা গুলি ছুড়ে । তাঁর পায়ে, মাথায়, ও বুকে গুলি লাগে।
তৎকালীন সময়ে স্থানীয়দের ধারণা মৃত্যু নিশ্চিত করে আততায়ীরা খুব সম্ভবত নৌকা যোগে মগড়া নদী পার হয়ে নাগরা এলাকা দিয়ে পালিয়ে যায়। গুলির শব্দে আশেপাশের মানুষ ও পাশেই এক্সিভিশন থেকে মানুষ ছুটে আসে। তাঁকে সাথে সাথে হাসপাতালে নেয়া হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান এই খবর শুনার সাথে সাথে, আব্দুল খালেককে হেলিকপ্টারে করে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার জন্য নির্দেশ দেন। কিন্তু তাঁকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। হাসপাতালের কর্তব্যরত ডাক্তারগণ তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
এর পূর্বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ১৯৭৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে তাঁকে ঢাকাতে ডেকে নিয়ে ময়মনসিংহ জেলার গভর্নর হবার জন্য বলেছিলেন। তখন নেত্রকোনা ছিল ময়মনসিংহ জেলার অধীনে একটি মহকুমা এবং বঙ্গবন্ধু বাকশাল শাসনের আওতায় প্রত্যেক জেলায় একজন গভর্নর নিয়োগ করার পরিকল্পনা করেছিলেন। এমপি খালেক সাহেব বঙ্গবন্ধুর খুব আস্থা ভাজন ছিলেন। খালেক সাহেবের মৃত্যুর খবর শুনে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, “আমার প্রিয় খালেককে ওরা মেরে ফেলেছে।”
আব্দুল খালেক নেত্রকোনা জেলার আটপাড়া উপজেলার দুওজ ইউনিয়নের মোঘলহাতা গ্রামের কৃতি সন্তান। তিনি ১৯৪৯ সালে নেত্রকোনা কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে প্রথম জিএস নির্বাচিত হন। পরবর্তী পর্যায়ে তিনি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৬৬ ছয় দফা আন্দোলন, ৬৯ এ গণঅভ্যুত্থানে অগ্রণী সৈনিকের ভূমিকা পালন করেন। তিনি নেত্রকোনা জেলা আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক হয়ে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে প্রদেশিক গত পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে একজন দক্ষ সংগঠক হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৩ সালে নির্বাচনে তিনি এমপি নির্বাচিত হন। তিনি বাংলাদেশের সংবিধানের ৫৪ নম্বর স্বাক্ষরকারী।
