কে. এম. সাখাওয়াত হোসেন, নেত্রকোনাঃ
নেত্রকোনা সরকারি মহিলা কলেজের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে আরেক কলেজের অনার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থীর ফেসবুকের মাধ্যমে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে। যা ফেনীতে নুসরাত শিক্ষক কর্তৃক যৌন নিপীড়নের শিকার এমন ধরনের ঘটে যেতে পারতো। এমন সমজাতীয় অভিযোগ ওই কলেজের পদার্থ বিজ্ঞানের প্রভাষক রাশিদ আহমেদ তালুকদারের রিরুদ্ধে। এর জের ধরে হাত জোড় করে ক্ষমা চাইলেন সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যৌন নিপীড়নকারী ওই শিক্ষক।
গত সোমবার সকালে নেত্রকোনা সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের শিক্ষার্থীদের ইনবক্সের স্কিনসটগুলো ফেইসবুকে ভাইরাল হয়। পরবর্তীতে বিষয়টি অভিভাবকদের নজরে আসলে ওই দিন দুপুরে ছাত্র অভিভাবক এবং মহিলা পরিষদসহ সামাজিক নেতৃবৃন্দ কলেজ অধ্যক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।
সেই সাথে স্কিনসটসহ একাধিক শিক্ষার্থীর সাথে এমন আচরণ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিতও হয়। এমনকি কবিতা শোনাতে অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কাছে চাওয়া মোবাইল নাম্বার না দিলে কলেজে এসে পরীক্ষা দেওয়ার হুমকী দেয়া, হীনমন্যতা সহ বাংলা বিভাগ অধ্যায়নরত শিক্ষার্থী ও জাতীয় বিশ্বাবিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানকে গালি দেওয়ারও অভিযোগ উঠে।
অভিযুক্ত শিক্ষক বিভিন্ন শিক্ষার্থীদের ফেইসবুক রিকুয়েস্ট পাঠিয়ে কবিতার বই বিক্রি করে দেয়ার নাম করে সখ্যতা গড়ার চেষ্টা করেন। ময়মনসিংহ কেবি কলেজেও একই ধরনের অভিযোগ শিক্ষর্থীদের। যেহেতু অনার্স পরীক্ষার কেন্দ্র এক কলেজের পরীক্ষার্থী অন্য কলেজে পড়ে। সেহেতু তিনি ছাত্রীদেরকে পরীক্ষার ভয় দেখান। যাতে করে পরীক্ষা দিতে আসার ভয়ে উনার সাথে সম্পর্ক রাখে। এর আগে অনেক শিক্ষার্থী এমন শিক্ষকের ভয়ে নিয়মিত পদার্থ বিজ্ঞান ক্লাস করেনি বলেও অভিযোগ উঠে।
পরে অভিযুক্ত শিক্ষককে সামনে রেখেই এ সকল অভিযোগের প্রাথমিক প্রমাণ মিললে এরই প্রেক্ষিতে কলেজের পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে কলেজ কতৃপক্ষ অভিযুক্ত শিক্ষকের পরীক্ষার ডিউটি আপাতত বন্ধ করে দেন। পরবর্তীতে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে ছাত্র অভিভাবকরা কলেজ ত্যাগ করেন।
এদিকে নেত্রকোনায় নারীদের উচ্চ শিক্ষার একমাত্র প্রতিষ্ঠান যে কলেজটি সেটিতে এমন ধরনের শিক্ষককে দেখে ক্ষুব্ধ হন অভিভাবক ও সামাজিক নেতৃবুন্দ। মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তাহেজা বেগম কলেজে উপস্থিত হয়ে এমন ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে কলেজ কতৃপক্ষের কাছে নেত্রকোনার সুনাম অক্ষুন্ন রাখতে এবং আর কোন শিক্ষার্থীদেরকে যেনো বিরক্ত না করে সেজন্য দৃষ্টান্দমূলক শাস্তির দাবী জানান।
এবিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক রাশিদ আহমেদ বলেন, ফেইসবুকে ছাত্রীদের সাথে বন্ধুত্ব থাকতেই পারে আজকাল এটা ব্যাপার না। মেসেঞ্জারের কথায় কারো খারাপ লেগে থাকলে তারজন্য ক্ষমা চাই।
ওই কলেজের উপাধ্যক্ষ কাজী ফারুক বলেন, একটি মেয়ের অভিযোগ থাকলে একটা কথা ছিলো। এমন একাধিক মেয়ের সাথে একই আচরণ বারবার করে আসছে। তার এমন অপরাধের জন্য ব্যবস্থা নেওয়ারও আশ্বাস দেন তিনি।
কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, ছাত্রীদেরকে পরীক্ষার কথা হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। তাই এই মূহুর্ত থেকে অভিযুক্ত শিক্ষকের পরীক্ষার হল পরিদর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন স্থগিত রাখা হলো। চলমান পরীক্ষায় সে ডিউটি করবে না। তদন্ত সাপেক্ষে বিভাগীয় ব্যবস্থা না নেয়া পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে।