বাবলী আকন্দ : বর্ণাঢ্য র্যালী ও আয়োজনের মধ্য দিয়েই ময়মনসিংহে পালিত হলো ২৮ তম আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস ও ২১ তম জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস। টাউনহল থেকে শুরু করে বর্ণাঢ্য র্যালীটি মূল সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবার টাউনহলে এসে শেষ হয়। এডভোকেট তারেক স্মৃতি অডিটোরিয়াম এ আলোচনা সভা ও অনুদানের চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে ঢুকতে গিয়ে এ প্রতিবেদক দেখতে পায় ১০-১২ টি হুইল চেয়ার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিগণ এডভোকেট তারেক স্মৃতি অডিটোরিয়ামে প্রবেশ মুখের সিঁড়ির গোড়ায় মন খারাপ করে অপেক্ষায় আছেন। ইতিমধ্যেই সুস্থ ও সবল ব্যক্তিগণ হলরুমে প্রবেশ করেন। সেখানে আলোচনা শুরু হয়ে যায়। কিন্তু বাইরে অপেক্ষামাণ হুইল চেয়ার ব্যক্তিগণ ভেতরে প্রবেশ করতে পারছেন না। কেননা সেখানে প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রবেশগম্যতার কোন সুযোগ নেই।
কিছুক্ষণ পর প্রতিবন্ধী সাহায্য ও সেবাকেন্দ্রের কয়েকজন এগিয়ে আসলে হুইল চেয়ার প্রতিবন্ধী ভাইবোনেরা এর প্রতিবাদ করেন এবং বলেন একজনকে না হয় ধরাধরি করে উঠিয়ে হলরুমে নিয়ে যাওয়া যাবে কিন্তু ১০/১২ জন ব্যক্তিকে কি করে নেয়া যায়! যাদের জন্য এই আয়োজন তাদের অনেকেই সেখানে প্রবেশের ক্ষেত্রে অনেক বেগ পেতে হয়েছে। তারা এসময় দাবী করেন এখানে র্যাম্প এর ব্যবস্থা গ্রহণে যেন সিটি কর্পোরেশন এবং প্রশাসন মানবিক হয়,সে অনুরোধ জানান বিশেষ ভাইবোন।
বাংলাদেশ গেজেটে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সুরক্ষা আইন ২০১৩ এ প্রবেশগম্যতা (ক)তে বলা হয়, সরকারী, সংবিধিবদ্ধ ও বেসরকারি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান এবং তাহাদের কর্তৃক প্রদত্ত সুবিধা ও সেবাসমূহে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির প্রবেশগম্যতা ও যাতায়াতের সুযোগ সৃষ্টির ব্যবস্থা করা। খ) উপরি উক্ত দফা (ক) এর অধীন নিম্ন বর্ণিত সেবা ও সুবিধাসমূহ অন্তর্ভুক্ত থাকিবে। যথা,(অ) ভবন, যানবাহন, রাস্তাঘাট, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, আদালত, পুলিশস্টেশন, রেলস্টেশন, বাসটার্মিনাল,লঞ্চ টার্মিনাল,, সমুদ্রবন্দর, স্থলবন্দর, দুর্যোগকালীন আশ্রয়ক্রেন্দ্র, সাইক্লোন সেন্টার, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের স্থান, পরিষেবার স্থান, বিনোদন ও খেলাধুলার স্থান,দর্শনীয় স্থান, পার্ক, গ্রন্থাগার, গণশৌচাগার এবং আন্ডারপাস ও ওভারব্রিজসহ ও জনগনের নিয়মিত যাতায়াতের সকল স্থান ইত্যাদি। (আ) তথ্য,যোগাযোগ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, চিকিৎসা সেবা,ব্যাংকিং সেবা এবং বৈদ্যুতিক ও জরুরী সেবাসহ সকল সেবা।
গণস্থাপনায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তির প্রবেশগম্যতা নিশ্চিতকরণে (১) আপাতত বলবৎ অন্য কোন আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন,গণস্থাপনা প্রতিবন্ধী ব্যক্তির প্রবেশগম্যতা নিশ্চিতকল্পে বিল্ডিং কনষ্ট্রাকশন এক্ট ১৯৫২(East Bengal act II of 1953) তদধীন প্রণীত বিধিবিধান অনুসরণ করিতে হইবে।(২)উপধারা ১ এ বলা হয়েছে এ যাহা কিছুই থাকুক না কেন সর্বসাধারণ গমণ করে এইরুপ বিদ্যমান সকল গণস্থাপনায় এই আইন কার্যকর হইবার পর যথাশীঘ্র ও যতদূর সম্ভব প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের আরোহণ, চলাচল ও ব্যবহার উপযোগী করিতে হইবে। গণস্থাপনায় ব্যাখ্যায় আছে এই ধারায় গণস্থাপনা বলতে সর্বসাধারণ গমণ বা চলাচল করে এমন আধা সরকারি ও বেসরকারি ইমারত বা ভবন, পার্ক, স্টেশন, বন্দর, টার্মিনাল ও সড়ককে বুঝাইবে।
কিন্তু ময়মনসিংহের খোদ জেলা প্রশাসন, বিভাগীয় প্রশাসনসহ সমাজসেবা প্রতিষ্ঠানের বিল্ডিং এ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রবেশগম্যতার সুযোগ নেই। এসব প্রতিষ্ঠানে সেবা নিতে গিয়ে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রায়ই ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়। প্রতিবন্ধী দিবসে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের এ দাবী পূরণে সিটি, জেলা ও বিভাগীয় প্রশাসন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
প্রতিবন্ধী অভিগম্য আগামীর পথে মূলসুরটিকে প্রতিপাদ্য করে ২৮ তম আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস ও ২১ তম জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস উপলক্ষে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসন এবং জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের আয়োজনে প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র, ময়মনসিংহ এবং স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণ সংস্থাসমুহ , ময়মনসিংহ এর সহযোগিতায়
আলোচনা সভা ও অনুদানের চেক বিতরণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আলোচনায় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার এ এইচ এম হাসনাত লোকমান, এডিশনাল ডি আই জি ড. আক্কাস উদ্দিন ভুইয়া, সমাজসেবা অধিদফতরের বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক তাহমিনা আক্তার, স্বাগত বক্তব্য জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক আবু আব্দুল্লাহ মো: ওয়ালী উল্লাহ। সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মো: মিজানুর রহমান। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফোরামের সভাপতি শাহাদত সারোয়ার।
পবিত্র কুরআন থেকে তিলাওয়াত করেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মো: সাকিবুল ইসলাম, গীতা থেকে পাঠ করেন শহর সমাজসেবা কার্যালয়ের পৌর সমাজকর্মী সুপ্রিয় দত্ত। সঞ্চালনায় জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো: আসাদুজ্জামান আসাদ।