জ্যোতি রানীর কাহিনী
মোঃ আলিফ হাসান স্বাধীন
(৯ম শ্রেণী, ময়মনসিংহ ল্যাবরেটরি উচ্চ বিদ্যালয়)
আমার নাম জ্যোতি। আমি একটি রাজ্যের প্রধান। সবাই আমাকে জ্যোতি রানী বলেই জানে।আমার জীবনের দুঃখ, কষ্ট সবই আমার রাজ্যের মানুষদের জন্য। ওদের সাথে বিভিন্ন সময়ে নাচ গানের আয়োজনের মাধ্যমে কিংবা বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আমার দিন কাল ভালোই চলে। ওরা অন্য রাজ্যের রানীদের সামনে আমার নামে অনেক প্রশংসা করে। আমার মতো লক্ষী দায়িত্ববান রানী নাকি ওরা দ্বিতীয়টি পায়নি। আমারও এ নিয়ে অনেক গর্ব হয়। আশেপাশে যতগুলো রাজ্য আছে ততগুলোর মধ্যে আমাদের রাজ্য সবচেয়ে বড় এবং সেরা। বিভিন্ন রাজ্যের রাজারা তাঁদের বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানে সম্রাট এবং নবাবের পরেই আমাকে প্রধান অতিথির মর্যাদা দেয়।রানী হওয়ার সুবাদে অনেক জায়গায় দাওয়াত পাই।
এইতো, গেলো সপ্তাহে শাওনের সাথে সাদিয়ার বিয়ে হলো। কন্যা সম্প্রদানের সময় সাদিয়ার বাবা কি যে একটা কান্ড ঘটিয়ে ফেললো আমি না গেলে হয়তো তার সমাধানই হতো না। সাদিয়ার বাবার সাথে শাওনের বাবা ঝগড়া লাগিয়েছে। কারণ হলো শাওনের বাবা ১ হাজার ১ শ ১ টি স্বর্ণমুদ্রা যৌতুক চেয়েছে। এতগুলো স্বর্ণমুদ্রা দেয়া কি আর মুখের কথা!১ টি স্বর্ণমুদ্রা পাওয়ার জন্য কত পরিশ্রমই না করতে হয়। আর সেখানে এতোগুলা স্বর্ণমুদ্রা! শাওনের বাবা ভালোভাবেই জানে এগুলো রোজগার করা কত সময়ের প্রয়োজন। অবশেষে সাদিয়ার বাবা হাল ছেড়ে দিয়ে বলে, আমি আর শেষ পর্যন্ত মেয়ের বিয়েটা দিতে পারলাম না! তখন আমি আর উপায়ন্তর না দেখে ঘোষণা দিলাম,সাদিয়ার বাবাকে যথাসাধ্য স্বর্ণমুদ্রা রাজ্যের কোষ থেকে আমি দিবো। কারণ সাদিয়ার বাবার একার পক্ষে এতোগুলো স্বর্ণমুদ্রা দেয়া সম্ভব নয়। সেটা সবাই জানে। শেষমেশ অনেক কষ্টে বিষয়টা সমাধান করলাম। সাদিয়া কাঁদতে কাঁদতে আমাদের রাজ্য থেকে বিদায় নিয়ে ঘোড়ার গাড়িতে করে শ্বশুরবাড়িতে গেল। এরকম বহু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব আমাকে পালন করতে হয়। আমার সহপাঠীরাও আমাকে সব কাজে সহযোগিতা করে।
কিন্তু এতো সুখের মাঝেও আমার জীবন এতো দুঃখময়। কেন জানি মনের ভেতর আমার শান্তি নেই। আত্মার তৃপ্তি নেই। কারণ কিছুদিন এক অজানা প্রেমিক আমাকে প্রেমপত্রের বার্তা পাঠায়। অজানা প্রেমিক নাকি তার চোখের অপরুপ মায়ায় আপ্লূত হয়ে পড়ে। তাঁর চোখের মধ্যে দেখতে পাই প্রেমময় মধুর ভালোবাসা। প্রেমপত্রে এসব কথা পড়ে রানী নির্দিষ্ট জায়গায় প্রেমিককে দেখা করতে বলে। তারপর রানী অজানা প্রেমিকের মুখোমুখি না হয়ে অভিমানে চলে যান দুই সহপাঠী রেখে। কিন্তু প্রেমিক জানে যদি একটুও মায়ার টান না থাকতো তাহলে রানী অভিমান করতে পারতো না। রানীর মনে যদি দরদ না থাকতো তাহলে কেন মুখোমুখি এসে কথা বললো না,কেন তার সাথে ঝগড়া করতে পারলো না। ইচ্ছে করলে তো পাগলটার গালে চর মারতে পারতো, তবুও মানেনি। এর কারণ রানীও সেই পাগলটার কথা মনে মনে ভাবে।
কিন্তু কোথায় যে তার দুঃখ রানী তা বুঝতে পারে না। অনেকদিন আগে একবার এক ঘটনা ঘটে। আমরা তখন এই রাজ্যে থাকতাম না। এখান থেকে পূর্বদিকে ৩০ মিনিট ঘোড়ায় গেলে একটা রাজ্য পড়ে। রাজ্যটা তেমন বড় ছিল না। আশেপাশে তেমন কোন রাজ্য না থাকায় ওটাই ছিল আমাদের একমাত্র ভরসা। একদিন গুগার মতো দেখতে কিছু লোক এসে আমাদের চিরতরে ধ্বংস করার পদক্ষেপ নিল। আমরা তখন দুপুরের খাবার খেয়ে ঘুমিয়েছি। কেউ বুঝতেও পারিনি কি হতে যাচ্ছে। হঠাৎ গাছ কাটার আওয়াজ পেলাম। মনে হচ্ছে গণহারে যেন গাছ কাটা হচ্ছে। কিন্তু না তারা জানালার ফাঁক দিয়ে তীরের নিশানা করছিলো।
মা অবস্থা বুঝতে পেরে আমাকে আগেভাগেই বাঁচানোর নির্দেশ দিল সৈন্যদের। আমি মাকে ছেড়ে যেতে না চাইলেও ওরা জোর করে অন্য একটা রাজ্যে রেখে এলো। আর বাকি কর্মীদের বাঁচাতে না কতো সংগ্রাম করে শেষমেশ নিজের জীবনটাকেও উৎসর্গ করে দিলো। এটার ভয়ানক বর্ণনা যারা সেদিন পালিয়ে বাঁচতে পেরেছে তাদের কাছ থেকে শুনেছি।
এই ঘটনার পর থেকেই স্বভাবতই মানুষের উপর আমার প্রচন্ড ক্ষোভ থাকার কথা।কিন্তু মাঝে মাঝেই খুব কষ্ট হয়। আমরা সবাই এক রকম দেখতে শুনতে হলেও সব মানুষেরা এক রকম না। মানুষের মধ্যে কেউ কেউ ভালো আবার কেউ খারাপ। খারাপ মানুষের উপর রাগ হলেও যখনি নিষ্পাপ শিশুগুলোকে রাজ্যের পাশে বাগানে খেলতে দেখি তখনই আমার সব রাগ উধাও হয়ে যায়। রাজ্যের দেয়ালে বল লাগতে পারে ভেবে ওরা কিছুদিন হলো বাগানে আর খেলতে আসে না। বাড়ির উঠোনেই খেলে। কি জানি! সৈন্যদের দিয়ে কারাগারে পাঠাবো ভেবেই হয়তো ভয়ে আর খেলতে আসে না। কিন্তু ওরা খেলতে আসলেই যেন মনে একটা প্রশান্তি আসে। ওদের মাঝেই যেন আমার পরিবারের সকলকে দেখতে পাই।