পূর্বময় ডেস্কঃ জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের ৭০ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করতে চায় উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। এ উপলক্ষে মাসব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দলটি। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনের পরিকল্পনায় রয়েছে রাজধানীসহ দেশের সব জেলা ও উপজেলা সদরে আলোকসজ্জার। এছাড়া এবারই প্রথম দলটির ‘আঁতুড়ঘর’ হিসেবে পরিচিত পুরান ঢাকার ঐতিহাসিক রোজ গার্ডেন ঘিরে থাকবে আয়োজন।
১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পুরান ঢাকার কেএম দাস লেনের রোজ গার্ডেনে প্রতিষ্ঠা হয় আওয়ামী লীগের। প্রতিষ্ঠার দুই যুগে দলটির নেতৃত্বে স্বাধীন হয় বাংলাদেশ। রোজ গার্ডেন থেকে কয়েকটি জায়গা বদল হয়ে ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়ে দেশে ফেরার পর দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় হয় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে। ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দলের ১০ তলাবিশিষ্ট কার্যালয়ের উদ্বোধন করেন দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, বাংলাদেশের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে আওয়ামী লীগের নাম। তাই আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করা হবে জমকালো আয়োজনে। ওইদিন সারা দেশে উৎসবমুখর একটা পরিবেশ আমরা সৃষ্টি করতে চাই।
এদিকে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মাসব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘২৩ জুন (আগামীকাল) আমাদের দলের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, এ উপলক্ষে আমরা ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। আমরা আমাদের কর্মসূচিকে কালারফুল করতে চাই। মাসব্যাপী আমাদের এ কর্মসূচি চলবে ২৩ জুলাই পর্যন্ত।’
তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সভা-সমাবেশ, সেমিনার ও রেলী, প্রচার ও পুস্তিকা প্রকাশ, রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতাসহ থাকছে ব্যতিক্রমী আরো কিছু আয়োজন।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীকে জমকালো করতে দফায় দফায় বৈঠক করছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, দলীয় সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়, ঐতিহাসিক রোজ গার্ডেনসহ রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক, বিভাগীয় শহর, জেলা ও উপজেলা সদরে আলোকসজ্জার পরিকল্পনা করা হয়েছে। প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ড নেতাদের নিজ নিজ এলাকার দলীয় কার্যালয় ও গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় দলের ইতিহাস ঐতিহ্য তুলে ধরে মাইকে প্রচার এবং ব্যানার-ফেস্টুন লাগানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া রাজধানীর প্রবেশপথ ও গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোয় আলোকসজ্জা করতে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের মেয়রকে বিশেষভাবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের নেতারা বলেন, বর্ধিত সভায় দলীয় সাধারণ সম্পাদক আমাদেরকে রাজধানীতে আলোকসজ্জা করতে নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া বিভিন্ন সড়কে নানা রঙের ব্যানার-ফেস্টুন লাগানোর জন্য বলা হয়েছে। এসব ব্যানার-ফেস্টুনে শুধু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ব্যবহার করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
আগামীকাল সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের পরে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি উদ্বোধন করবেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। এরই মধ্যেই তৃণমূলে পাঠানো নির্দেশনায় কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সঙ্গে সমন্বয় করে কর্মসূচির পাশাপাশি জেলা-উপজেলা এবং ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পর্যায়ে আলাদা কর্মসূচি পালন করতে বলা হয়েছে।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাত বলেন, রাজধানীতে আলোকসজ্জার জন্য সিটি করপোরেশন ও গণর্পূতমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারাই রাজধানীতে আলোকসজ্জা করবে। এছাড়া রোজ গার্ডেন এবং নবাবপুরে আওয়ামী লীগের যে কার্যালয় ছিল, সেগুলোও আলোকসজ্জা করা হবে।
এদিকে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ২৪ জুন রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভার আয়োজন করবে আওয়ামী লীগ। ২৫ জুন বিকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। সাংস্কৃতিক উপকমিটির তত্ত্বাবধানে দেশবরেণ্য শিল্পীরা গান পরিবেশন করবেন।
আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল বলেন, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আমাদের মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা অনুষ্ঠিত হবে। এতে গান, কবিতা আবৃত্তিসহ নানা আয়োজন থাকবে। যাতে অংশগ্রহণ করবেন দেশবরেণ্য শিল্পীরা।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের বৃহৎ ও ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল। বাংলাদেশের যা কিছু অর্জন, তার সবই হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছি, এখন তার কন্যার নেতৃত্বে দেশের অর্থনৈতিক মুক্তি সাধিত হচ্ছে। আওয়ামী লীগ হলো জনমানুষের দল। এটা একটা অনুভূতির নাম। আর এ অনুভূতির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী জমকালোভাবেই করা হবে।
উল্লেখ্য, পুরনো ঢাকার ঐতিহ্যবাহী রোজ গার্ডেনে আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে এই দলের আত্মপ্রকাশ ঘটলেও পরে শুধু আওয়ামী লীগ নাম নিয়ে অসাম্প্রদায়িক সংগঠন হিসেবে বিকাশ লাভ করে। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এ দেশে পাকিস্তানি সামরিক শাসন, জুলুম, অত্যাচার-নির্যাতন ও শোষণের বিরুদ্ধে সকল আন্দোলন-সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে এ দলটি।
’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ’৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, আইয়ুবের সামরিক শাসন-বিরোধী আন্দোলন, ’৬৪-এর দাঙ্গার পর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা, ’৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলন ও ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের পথ বেয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের ২৪ বছরের আপোষহীন সংগ্রাম-লড়াই এবং ১৯৭১ সালের নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধ তথা সশস্ত্র জনযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ওই বছরের ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের মধ্যদিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় বাঙালির হাজার বছরের লালিত স্বপ্নের ফসল স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।