শিপলু জামান, ঝিনাইদহ:
ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের চিত্রা নদীর জায়গা দখল চলে আসছে দীর্ঘদিন। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন দখলবাজদের আবির্ভাব ঘটে। নিয়ন্ত্রণ না থাকায় ক্ষমতার পালাবদলে দখলবাজদের সংখ্যাই দিন দিন বৃদ্ধি পেয়েছে। স্থানীয় প্রভাবশালীরা নদীর জমিতে বসতবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। আবার জায়গা আয়ত্তে রাখতে কাটা হয়েছে ছোট বড় পুকুর। কেউ কেউ নদী দখল করে পরিণত করেছে ফসলি মাঠে। এখন দখলবাদে নদীর মাঝখানে যতটুকু জায়গা আছে দুর থেকে মনে হচ্ছে এ যেন সরু খাল। আবার এখানেই চলছে দূষণ সৃষ্টির পালা। সর্বোপরি খননের অভাবে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে এ নদীটি।
স্থানীয়দের ভাষ্য, অতীতে অনেকবার নদী দখলমুক্ত করতে সরকারিভাবে উদ্যোগ নিয়ে কিছুটা কাজ করা হলেও অদৃশ্য কারণে তা বন্ধ হয়ে গেছে। সম্প্রতি বর্তমান সরকারের অনেক দায়িত্বশীলতার স্থান থেকে নদীগুলো দখলমুক্ত করে খননের কথা বারবার প্রচার করছেন। স্থানীয় প্রশাসনও নদীর জায়গা মেপে সার্ভেও করেছেন। স্থানীয়দের আশা এবারই দখলমুক্ত করে শুর“ হবে চিত্রার খননের কাজ। এদিকে দখলমুক্ত করার ঘোষণায় দখলবাজেরা রয়েছে আতঙ্কে।
চিত্রার দু’ধারের বাসিন্দা আজিজুল জানান, এক সময়ের প্রমত্তা চিত্রা নদীটি আজ অস্তিত্ব সঙ্কটে। দেশের দক্ষিণাঞ্চালের কয়েকটি জেলার সংযোগকারী এ নদীর ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ অংশের নিমতলা ও মধুগঞ্জ বাজার সংলগ্ন এলাকার দু-পাশে দেদারছে ফেলা হচ্ছে ময়লা আবর্জনা। শহরের ড্রেনের মাধ্যম দিয়ে নদীতে চলে যাচ্ছে বজর্য। ফলে যতটুকু পানি আছে তা দূষিত হয়ে যাচ্ছে। দু’পাড় থেকে জায়গা দখল করে তৈরি করা হয়েছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বসতবাড়ি, বড় বড় ভবন। দখলের কবলে ৩৯ মিটার প্রস্থের নদীটি এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। এখন যতটকু জায়গা আছে তা মাত্র কয়েক মিটার প্রশস্থ হবে। দিনের পর দিন এক শ্রেণীর প্রভাবশালী মানুষ নদী দখল করলেও যেন দেখার কেউ নেই। এখন মাটি ভরাট হয়ে বর্ষাকালে কিছুটা পানি থাকলেও শুকনা মৌসুমে পানি চোখে পড়ে না বললেই চলে। চিত্রা হারিয়ে ফেলেছে তার নাব্য । এমনটা হলেও প্রভাবশালীদের ভয়ে কিছু বলতেও পারে না সাধারণ মানুষ।
ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত ঐতিহ্যবাহী চিত্রা নদীর তীর ঘুরে দেখা যায়, চিত্রা নদীর দুই তীর দখল করে মাটি দিয়ে ভরাট করে তৈরি করা হয়েছে পাকা বাড়ি, ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান, ক্লাব ঘর, রাজনৈতিক দলের অফিস কিংবা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। নদীর বুকে চাষাবাদ দেখে মনে হচ্ছে এটা যেন ফসলি ক্ষেত। এখন বর্ষা শুর“ হলেও নদীতে পানি নেই। কোন কোন স্থানে অল্প অল্প পানি থাকলেও পরিমানটা হাটু পানির বেশি নয়। আর যে সকল স্থানে পানি আছে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলে নদী দূষণ করা হচ্ছে। ফলে নষ্ট হচ্ছে নদীর পানি, দূষণ ছড়িয়ে পড়ছে আশপাশে। এক দিনের দেশীয় মাছের বিচরণ ক্ষেত্র নদী আজ পানির অভাবে মাছ শুন্য। বেকার হয়ে পড়েছে নদী এলাকার মস্যজীবীরা।
কালীগঞ্জ সমাজ সেবক সদরউদ্দীন মিয়া বলেন, নদীর মধ্যে মাটি এবং বজর্য দিয়েও ভরাট করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আজ নদীর সঙ্গে সংযুক্ত খালেও নেই পানি। এর ফলে প্রভাব পড়েছে কৃষি জমির সেচ কাজেও।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুবর্ণারানী সাহা জানান, নদী গুলো সরেজমিন পরিদর্শন করে অবৈধ দখলকাজদের চিহ্নিত করা হয়েছে। এদের দ্র“তই উচ্ছেদ করা হবে। এর আগে নদীগুলোতে যারা পাটা দিয়ে নদীর স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ বন্ধ করেছিল তাদের বির“দ্ধে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। নদীগুলোতে দুষণ চলছে এমন অভিযোগ পেয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে দোষীদের বির“দ্ধে ব্যবস্থা অব্যাহত রয়েছে। তবে পরিবেশ রক্ষায় চিত্রাকে বাঁচানো দরকার। উপরি নির্দেশনা মোতাবেক তারা চিত্রা দখলমুক্ত করবেন বলে আশ্বাস দেন।