পূর্বময় ডেস্ক ঃ ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলায় টিলাটিয়া গ্রামের মো. আব্দুল কুদ্দুছ (৬০), পিতা হোসেন আলী এবং তার ভাতিজা মো. ওবায়দুল্লাহ (৪০), পিতা মৃত আলী হোসেন। এদের দুই জনের ২ একর পরিমাণ ফিশারির ব্যবসার জন্য গৃহীত পিডিবি’র বিদ্যুৎ সংযোগে হয়রানী ও মিথ্যা অভিযোগে ২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচালরীরা আত্মসাতের ঘটনা ঘটে গত জানুয়ারি মাসে। অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ৬ জানুয়ারি গভীর রাত পৌনে ৩টায় গোপনে ভুক্তভোগীদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে মিটার-পানির পাম্প, সংযোগ তারসহ বিভিন্ন মালামাল কোন নিয়ে যায় পিডিবি ফুলপুর অফিসের উপসহকারী প্রকৌশলী মোকছেদুল কবির মিল্টন একই অফিসের কম্পিউটার অপারেটর আশরাফুল, কর্মচারী চান মাহমুদ সহ কয়েকজন। পরেরদিন সকালে বিষয়টি বুঝতে পেরে ভুক্তভোগী পরিবার বিদ্যুৎ অফিসের যোগাযোগ করলে তাদের ৭ লাখ টাকার মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেয়া হয়। ভুক্তভোগীদের ভাষ্যমতে সম্পূর্ণ কাল্পনিক অভিযোগে তাদের কাছে ৩ লক্ষ টাকা দাবী করে বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তারা। নিয়মিতই বিদ্যুৎ অফিসের কর্তাদের প্রত্যক্ষ সহায়তায় কর্মচারী ও দালালদের মাধ্যমে গ্রাহকদের বিভিন্নভাবে ফাঁসিয়ে টাকা আত্মসাতের ঘটনা ঘটছে বলে স্থানীয়দের দাবী। গড়বিল, মিটারবিহীন বাণিজ্যিক সংযোগ, অতিরিক্ত বিল আদায়, মিথ্যা অভিযোগ এনে জরিমানা আদায়, সচল মিটার পরিবর্তন করে নতুন মিটার প্রতিস্থপন, ঘুষগ্রহণের মাধ্যমে বিল কমানোসহ বিভিন্ন অপরাধের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে একটি চিহ্নিত চক্র মূল্যবান সরকারি সম্পদ বিদ্যুতের অপব্যবহারের মাধ্যমে গ্রাহকদের হয়রানী করে আসছে।
হয়রানীর শিকার অনেকের মতো আব্দুল কুদ্দুস ও তার ভাতিজা তাদের ফিশারি ব্যবসায় ক্ষতির আশংকায় অবশেষে ২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা দিয়ে সংযোগ ফেরত পান। জরিমানা হিসেবে টাকা গ্রহণ করলেও কোন রশিদ না দেয়ায় তাদের সন্দেহ হয় পুরো টাকাটা বিদ্যুৎ অফিসের কর্মচারীরা আত্মসাৎ করেছে। টাকা প্রদানের পুরো ঘটনাটি ভুক্তভোগীদের একজনের নতুন মোবাইল ফোনে অজান্তেই ভিডিও ধারণ হয় যা যে প্রায় ২ মাস পর বুঝতে পারে। ভিডিওটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। খোদ নির্বাহী প্রকৌশলীর অফিস কক্ষে টাকা গ্রহণের ঘটনায় বিভিন্ন সময় পিডিবির প্রতারণা ও হয়রানীর শিকার গ্রাহকদের মাঝে ক্ষোভ ছড়িয়ে পরে। ভূক্তভোগীরা প্রতিকার পেতে বিদ্যুৎ অফিসে অভিযোগ করলেও কোন প্রতিকার না পেয়ে গত ১৫ এপ্রিল বিদ্যুৎ আদালতের দ্বারস্ত হয়।
আদালতের নির্দেশে পরিচালিত তদন্তে বের হতে থাকে ফুলপুর পিডিবি সংশ্লিষ্ট চক্রটির অভিনব গ্রাহক হয়রানীর চিত্র। চক্রটি সম্ভাব্য বিপদ বুঝতে পেরে বিচারিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ করতে উঠে পড়ে লেগেছে বলেও অভিযোগ করছে ভুক্তভোগীরা।
ভুক্তভোগী উবাইদুল্লাহ বলেন, প্রতিকারের পরিবর্তে তার ও তার চাচার নামে উল্টো মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে পিডিবি’র সেই চক্রেরই যোগসাজসে। বিউবো ফুলপুর নির্বাহী প্রকৌশলী শাহ আলম শেখ নিজে বাদী হয়ে ওই ২ ফিসারী মালিকের নামে বিদ্যুৎ আইনের ২০১৮ সালের ৩২(২) ও ৩৩(১) ধারা মোতাবেক ময়মনসিংহ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। যাদের মাধ্যমে চাঁদা উঠিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী তার নিজের পকেট ভারী করতেন এমন ৩জনকে স্বাক্ষী হিসেবে অভিযোগপত্রে অন্তর্ভুক্ত করেন। বিভিন্নভাবে হুমকি ও ভয়-ভীতি দেখিয়েও কোনভাবেই নিবৃত্ত করতে না পেরে গত ৮ রমজান মঙ্গলবার অর্থাৎ ১৪ মে উপসহকারী প্রকৌশলী মোকছেদুল কবির মিল্টন ও কর্মচারী চাঁন মাহমুদ অভিযোগকারীর বাড়িতে গিয়ে মামলা উঠিয়ে নেবার জন্য প্রকাশ্য হুমকি দেন ও গালিগালাজ করেন। কিন্তু গ্রামের লোকজন একত্রিত হয়ে উবাইদুল্লাহ ও তার চাচার সাথে সংঘটিত অন্যায়ের বিচার চাইলে তারা ভীত হয়ে প্রস্থান করে। তবে তার আগেই তারা কৌশলে ভুক্তভোগীর সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেয়।
উক্ত সংযোগ সংশ্লিষ্ট অভিযোগ বিদ্যুৎ আদালতে বিচারাধীন থাকার পরও কীভাবে কার নির্দেশে তা বিচ্ছিন্ন করা হলো জানতে চাইলে বিদ্যুৎ অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহ আলম শেখ সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করার ঘটনা অস্বীকার করেন। যদিও সংযোগ বিচ্ছিন্নের ঘটনাটি এলাকার সকলের জানা ছিল।
এদিকে বিনা নোটিশে কোন কারণ ছাড়া সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় বিপাকে পড়েন আব্দুল কুদ্দুস ও তার ভাতিজা। তারা জানান, ফুলপুর পিডিবির অসাধু কর্মকর্তাতের চাঁদাবাজী আর গাফেলতিতে পুকুরের পানি পরিবর্তন না করতে পারায় পুকুরের সব মাছ মরে ভেসে উঠছে। মাছের পোনা ক্রয়, মাছের খাদ্য ক্রয়, শ্রমিকদেও মজুরি, বিদ্যুত বিল সব মিলিয়ে রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত প্রায় ১০ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে তাদের। দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ না পেলে তারা সর্বসান্ত হয়ে যাবেন বলে আশঙ্কা করেন। এজন্য তিনি পিডিবির এই অসাধু নির্বাহী প্রকৌশলী শাহ আলম শেখ, উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোকছেদুল কবির, লাইনম্যান জমশেদ মিয়া এবং সাহায্যকারী হাফিজুল ইসলাম কে দায়ী করে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করেন।
স্থানীয় এলাকাবাসী এবং বিদ্যুৎ গ্রাহকদের অনেকেই পিডিবি’র এই অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আইনের আওতায় এনে কঠিন শাস্তি নিশ্চিত সহ ফিসারী মালিকদের ক্ষতি পুরণ নিশ্চিতে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সর্বশেষ জানা যায়, বিভিন্নমুখী চাপে আজ (১৮ ই মে ২০১৯- শনিবার) গভীর রাত আনুমানিক ২ টায় ফুলপুর বিদ্যুৎ অফিস হতে সংযোগটি পুনঃস্থাপন করা হয়েছে। মূলত, নিজেদের দুর্নীতি ও অপকর্মে ধরা পরার আশঙ্কায় তারা এভাবে রাতের অন্ধকারে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে আবার রাতের অন্ধকারেই সংযোগ লাগিয়ে গ্রাহকদের প্রতারণার সুযোগ তৈরি করে।