স্টাফ রিপোর্টার ঃ ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বরিয়ান গ্রামের বাসিন্দা মোঃ মিনহাজ উদ্দিন, পিতা-মোঃ শরিফুল ইসলাম। মিনহাজ পেশায় একজন ভাড়ায় অটো চালক। পিতাও মানুষের জমিতে খেটে খাওয়া মানুষ। ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির-১ এর অধীনে বরিয়ান গ্রামের পোল নং- Muk-1-49-48 এ স্থাপিত ২৫ কেভি ট্রান্সফর্মারের একজন নিয়মিত গ্রাহক মিনহাজ আলীর বাবা শরিফুল ইসলাম। কিন্তু
গত ২৪ মার্চ এই দরিদ্র অটোচালক মিনহাজের উপর ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১, মুক্তাগাছা জিএম মকবুল হোসেন গাছ কেটে ফেলে দিয়ে ট্রান্সফর্মার নষ্ট করার অভিযোগ এনে একটি নোটিশ পাঠান। নোটিশে ট্রান্সফরমার নষ্ট করা বাবদ ২৪,১৬২/- ( চব্বিশ হাজার একশত বাষট্রি টাকা) দাবি করে ৫টি দপ্তরে অনুলিপি প্রেরন করে। জিএম মকবুল হোসেন অটোচালক মিনহাজকে ১৫ দিনের সময় দিয়ে তার বাবার বৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন এবং উক্ত জরিমানা পরিশোধ না করলে মিনহাজের বিরুদ্ধে বিদ্যুৎ আইনে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে উল্লেখ করেন। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ওই ট্রান্সফর্মারের আশেপাশে ২০ গজের মধ্যে আদৌ কোন গাছপালাই ছিলো না। ট্রান্সফর্মারটি নষ্ট হয়েছিলো পল্লীবিদ্যুতের গাফেলতির কারনেই কিন্তু ফাঁসানো হয়েছিলো অটোচালক মিনহাজকে। এ বিষয়ে দৈনিক আজকের বাংলাদেশ এবং দৈনিক পূর্বময় ডট কম অনলাইন নিউজ পোর্টাল ” মুক্তাগাছা পল্লী বিদ্যুৎ কর্মকর্তাদের গাফেলতির কারনে জরিমানার নোটিশ পেলো অটো চালক” শিরোনামে খবর প্রকাশিত হলে তা দেখে সহযোগীতার হাত বাড়ান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) অনুপ্রেরনায় গঠিত সচেতন নাগরিক কমিটি সনাক, ময়মনসিংহে সম্প্রতি চালু হওয়া দুর্নীতি-হয়রানীর বিরুদ্ধে বিনামূল্যে আইনি পরামর্শ প্রদানকারী অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড লিগ্যাল অ্যাডভাইস সেন্টার (এলাক) এর ফ্যাসিলিটেটর। গত ১০ এপ্রিল জিএম মকবুলের নোটিশ নিয়ে টিআইবির সনাক ময়মনসিংহ অফিসে দেখা করা হয়। দীর্ঘ প্রায় একমাস অক্লান্ত পরিশ্রম করে বিনা খরচে অটোচালক মিনহাজের হয়ে মামলা নং 1363/2019 দায়েরে কৌশলগত সহায়তার মাধ্যমে গত ২ মে অটোচালক মিনহাজের বাবা শরিফুল ইসলামের বিচ্ছিন সংযোগটি চালু করে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয় এলাক সেন্টারের মাধ্যমে। আদালত ভূক্তভোগীর বক্তব্য শুনে পিবিএস-১ এর জিএম মকবুল হোসেনকে অতিদ্রুত অন্যায়ভাবে বিচ্ছিন্ন সংযোগ পুনঃস্থাপনে আদেশ ও সেইসাথে ৩ কার্যদিবসের জন্য একটি কারণ দর্শানো নোটিশও জারি করেন। অভিযুক্ত জিএম ও অন্যরা আদালতে লিখত জবাব দাখিল করলেও বিদ্যুৎ সংযোগ ফিরে দিতে টালবাহানা শুরু করে। তাই এলাক সেন্টারের সহায়তা নিয়ে ভুক্তভোগী মিনহাজ আবারো আদালতে একটি অভিযোগ দাখিল করেন। মিনহাজের বাবার নামে কোন অভিযোগ বা বিল বকেয়া না থাকায় আদালত দ্বিতীয়বার মাত্র ৩ ঘন্টার মধ্যে সংযোগ পুনঃস্থাপনে কঠোর নির্দেশ দেন। নির্দেশানুযায়ী তীব্র চাপের মুখে অবশেষে পবিস-১ এর জিএম দীর্ঘ দেড় মাস পর ১৩ মে (সোমবার) বিকেল ৩ টার মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ পুনঃস্থাপন নিশ্চিত করেন। দরিদ্র পরিবারটি কাঙ্খিত বিদ্যুৎ সংযোগ ফেরত পেলেও গ্রীষ্মের অস্বাভাবিক তাপদাহের মাঝে ভুক্তভোগী পরিবারকে অন্যায়ভাবে দীর্ঘদিন বিদ্যুৎ সুবিধা বঞ্চিত রাখায় তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে ভুক্তভোগীকে প্রয়োজনীয় সহযোগীতার আশ্বাস টিআইবি’র ফ্যাসিলিটেটর-এলাক । ময়মনসিংহ টিআইবি সনাকের সহযোগিতায় সেই দরিদ্র অটোচালক মিনহাজ অন্ধকারে থাকছে না আর।