পরশ মির্জা ঃ অাজ পৃথিবীব্যাপী দিবস পালনের ছড়াছড়ি। কত কি দিবস তার ইয়াত্তা নেই। অামরাও ঘটা করে এসব দিবস পালন করি। দিবসের ভিড়ে রয়েছে বাবা দিবস ও মা দিবস। এই দুটি দিবসে প্রাণভরে মন উজাড় করে প্রকাশ করি পিতা-মাতার প্রতি শ্রদ্ধা-ভক্তি। করি স্মৃতিচারন। এ দুটি দিবসে প্রকাশিত হয় গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ। টিভিতে প্রচারিত হয় টকশোসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান। কোথাও কোথাও পুরস্কৃত করা হয় পিতা-মাতাকে। চলতে থাকে পিতা-মাতাকে নিয়ে সন্তানের বন্দনা।
অাবার এই অামরা সন্তানরাই পিতা-মাতাকে
প্রেরণ করি বৃদ্ধাশ্রমে। কি দ্বিমূখী রুপ
অামরাদের! বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে যদি
বৃদ্ধাশ্রমেই গিয়ে থাকতে হয় তাহলে সন্তান
হিসেবে অামাদের দায়িত্বটা কি? সন্তান
থাকতে পিতা-মাতা বৃদ্ধাশ্রমে যাবেনই বা
কেন? সন্তান কি এতই ব্যস্ত যে, বৃদ্ধ
পিতা-মাতাকে দেখার ফুসরত তাদের নেই? এ
কোন মানসিকতা অামরা অর্জন করেছি?
কোন পিতা-মাতা কি সন্তান ছাড়া থাকতে
চান? কখনই চান না। অামরা তো টিভিতে
বৃদ্ধাশ্রমে বসবাসরত বৃদ্ধ পিতা-মাতাদের
সচিত্র প্রতিবেদন দেখি। সে কি বুকফাটা
অার্তনাদ, হাহাকার! এর জবাব কি? জবাব
একটাই। সন্তানদেরকে যথাযথ দায়িত্ব পালন
করা। পিতা-মাতাকে অাগলে রাখা। অামরা
সন্তানরা মানসিকভাবে অসভ্য হয়ে পড়েছি
বিধায় অাজ বৃদ্ধাশ্রম তৈরি হয়েছে। তাই
দরকার সন্তানদেরকে মানবিক ও বিবেকবান
হওয়া।
সম্প্রতি রাষ্ট্র কর্তৃক অাইন তৈরি হয়েছে যে, কর্মক্ষম সন্তানকে তার বৃদ্ধ পিতা-মাতার ভরণপোষণ করতে হবে। সন্তান অমানবিক হয়ে পড়েছে বিধায় রাষ্ট্র কর্তৃক এ ধরণের অাইন তৈরি করতে বাধ্য হয়েছে। সন্তান তো নৈতিক মানবিক দৃষ্টিতেই তার বৃদ্ধ পিতা-মাতার ভরণপোষণের দায়িত্ব পালন করবে। এটা তার দায়িত্ব ও কর্তব্য। এর জন্য রাষ্ট্র কর্তৃক অাইন তৈরির প্রয়োজন ছিল না। রাষ্ট্র অাইন তৈরি করতে বাধ্য হয়েছে। কারণ, সন্তান তার পিতা-মাতার ভরণপোষণের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছে না। চরম অমানবিক হয়ে পাঠিয়ে দেয় বৃদ্ধাশ্রমে।
বৃদ্ধাশ্রম অমানবিক বিবেকহীন সমাজের
কলঙ্ক বা প্রতিচ্ছবি। যা প্রতিনিয়ত
চপ্টাঘাত করছে সমাজকে। এই কলঙ্ক থেকে
মুক্ত হওয়াটা অতীব জরুরী। সমাজে সন্তান হিসেবে অামরা সেদিনই কলঙ্কমুক্ত হবো যেদিন দেখা যাবে বৃদ্ধাশ্রমে থাকার মত কেউ নেই। অার না থাকার কারনে সেগুলো বন্ধ হয়ে পড়েছে।