শ্রমিক শ্রেণির চেতনায় মহান মে দিবস উদযাপন করুন

Date:

Share post:

অনির্বাণ সেন ঃ মহান মে দিবসে এবছর সরকারের শ্লোগান হচ্ছে- “শ্রমিক- মালিক ঐক্য গড়ি, উন্নয়নের শপথ করি”। আর্থ- সামাজিক ব্যবস্থার ঐতিহাসিক বিকাশের দিকে তাকালে দেখা যায়, পুঁজির উদ্ভব ও বিকাশের সাথে শ্রমিক শ্রেণির উদ্ভব ও বিকাশ অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত থাকলেও শ্রম ও পুঁজির স্বার্থ বিপরীতমুখী। এ প্রেক্ষিতে কমিউনিস্ট পার্টির ইশতেহারে কার্ল মার্কস বলেন, ” যে অনুপাতে যন্ত্রপাতি শ্রমের বিভিন্ন ধরনের মধ্যকার সমস্ত পার্থক্য্ মুছে ফেলতে থাকে আর প্রায় সর্বত্রই মজুরি কমিয়ে আনে একই নীচু স্তরে, সেই অনুপাতে সর্বহারা শ্রেণির সারির অভ্যন্তরে বিভিন্ন স্বার্থ ও জীবন ধারণের বিভিন্ন অবস্থার ক্রমেই উত্তরোত্তর হতে থাকে। বুর্জোয়াদের মধ্যকার ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতা আর তার ফলে সৃষ্ট বাণিজ্য সংকট শ্রমিকদের মজুরিকে করে তোলে আরো বেশি উঠানামা। যন্ত্রপাতির অবিরাম উন্নতি সাধন যা অধিক দ্রুতই বিকাশ লাভ করতে থাকে, তা শ্রমিকদের জীবন- জীবিকাকে করে আরো বেশি অনিশ্চিত ; এক এক দল মেহনতকারি আর এক এক জন বুর্জোয়ার মধ্যকার সংঘাত ক্রমেই বেশি বেশি করে দুটি শ্রেণির মধ্যেকার সংঘাতের চরিত্র ধারণ করে। সে কারণে শ্রমিকেরা শুরু করে বুর্জোয়াদের বিরুদ্ধে জোট বাঁধতে ; মজুরির হার ঠিক রাখার জন্য তারা সংঘবদ্ধ হয় ; মাঝে মধ্যে যে সব বিদ্রোহ ঘটে তার জন্য আগে থাকতে প্রস্তুতির উদ্দেশ্যে তারা স্থাপন করে স্থায়ী সমিতি। এখানে সেখানে দ্বন্দ্ব- সংঘাত পরিলক্ষিত হয় হাঙ্গামায়। ” আজকের বাংলাদেশেও মজুরি বৃদ্ধির দাবি করলে স্বৈরাচারী রাষ্ট্রের পুলিশ বাহিনীর নির্বিচারে গুলিতে প্রাণ দিতে হয় শ্রমিকদের। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কনভেনশন ও দেশের আইনেও অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকারের কথা বলা থাকলেও বাস্তবিকে কোনো সেক্টরের মালিকরাই এ অধিকার প্রদান করছে না। ফলে শ্রমিক- মালিকের সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবে যেভাবে নির্ধারিত, সরকারী শ্লোগানের মাধ্যমে তাতে বিভ্রান্তি তৈরির চেষ্টা হলেও শ্রমিক শ্রেণির কাছে তা পরিস্কার। তাই শ্রমিক শ্রেনীর কাছে মে দিবসের চেতনা বিপ্লবী শপথে প্রদীপ্ত দিবস।

মহান মে দিবসের বিপ্লবী তাৎপর্য অনুধাবন করে আজকের প্রেক্ষাপটে তা কার্যকরী করা দেশে দেশের শ্রমিকশ্রেণীর অবশ্য কর্তব্য। মে দিবসের ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, উনবিংশ শতাব্দীর ষাটের দশকে আট ঘন্টা শ্রম দিবসের দাবীতে যে সংগ্রামের শুরু তা অগ্রসর হয়ে বিস্ফোরিত হয় ১৮৮৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্টের শ্রমিক আন্দোলনে। মার্কিন যুক্তরাষ্টের শ্রমিক আন্দোলনের জোয়ারের প্রেক্ষাপটে ১৮৬৬ সালে বাল্টিমোরে ৬০টি ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা গঠন করেন আমেরিকার শ্রমিকশ্রেণীর প্রথম জাতীয় ফেডারেশন ন্যাশনাল লেবার ইউনিয়ন। এই সম্মেলনে গ্রহণ করা হয় আট ঘন্টা শ্রমদিবসের ঐতিহাসিক প্রস্তাব। প্রস্তাবে বলা হয়, “এদেশের শ্রমিককে পুঁজিবাদী দাসত্বের হাত থেকে মুক্ত করার জন্য বর্তমানে প্রথম ও বিরাট অর্জন হচ্ছে এমন একটা প্রস্তাব পাশ করা, যার ফলে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সমস্ত রাজ্যগুলোতে আট ঘন্টাই যেনস্বাভাবিক কাজের দিন বলে গণ্য হতে পারে। যত দিন এই গৌরবময় ফল অর্জন করতে না পারি, ততদিন আমরা আমাদের সর্বশক্তি নিয়োগেগর সংকল্প নিচ্ছি।” বিশ্ব কমিউনিষ্টি আনোদালনের সূচনা হয় উনবিংশ শতাব্দীর ৪০-এর দশক। মহামতি মার্কস-এঙ্গেলস এর নেতৃত্বে রচিত কমিউনিষ্ট ইশতেহার ঘোষিত হয় ১৮৪৮ সালে। শ্রমিকশ্রেণীর সংগ্রামের গতিপথে ১৮৬৪ সালে গঠিত হয় প্রথম কমিউনিষ্ট আন্তর্জাতিক।
১৮৬৬ সালের সেপ্টেম্বরে প্রথম আন্তর্জাতিকের জেনেভা কংগ্রেসে গ্রহীত এক প্রস্তাবে বলা হয় যে, “কাজের দিনের বৈধ নিয়ন্ত্রণ একটি প্রাথমিক ব্যবস্থা, যা না হলে শ্রমিকশ্রেণীর উন্নতি ও মুক্তির সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হতে বাধ্য। এই কংগ্রেসে কাজের দিনের বৈধ সীমাকে আট ঘন্টা করার প্রস্তাব করছে।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_img

Related articles

সড়ক দূর্ঘটনায় পূর্বধলার মেধাবী ছাত্র তানভীর নিহত

পূর্বধলা প্রতিনিধিঃ স্বপ্ন দেখতেন একদিন অনেক বড় হবেন। বাবা-মা দেশের মুখ উজ্জ্বল করবেন। ছিলেন প্রচণ্ড পরিশ্রমী...

পূর্বধলায় যৌথ অভিযানে লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার, আটক ৫

শিমুল শাখাওয়াতঃ নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার জালশুকা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ম্যাগজিনসহ একটি নাইন এমএম পিস্তল উদ্ধার করেছে সেনাবাহিনীর...

পূর্বধলায় মাছ ধরা কে কেন্দ্র করে নিহত ১

মোঃ শাখাওয়াত হোসেন শিমুলঃ নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের মেঘশিমুল পশ্চিমপাড়া গ্রামে গতকাল শুক্রবার বিকেলে এ ঘটনাটি ঘটে। নিহত...

পূর্বধলায় শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী পালিত

মোঃ শাখাওয়াত হোসেন শিমুলঃনেত্রকোনার পূর্বধলা সার্বজনীন পূজা মন্দির এর উদ্যোগে সোমবার পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী শোভাযাত্রা ও আলোচনা...