পরশ মির্জা ঃ অাগামীকাল “মহান মে দিবস”। বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী ঘটা করে পালন করা হবে এদিনটি। শ্রমিকসমাজ লালপতাকা হাতে নিয়ে এবং লাল
ফিতা মাথায় বেঁধে মুখরিত হবে। মালিকপক্ষ সহ অন্যান্য গোষ্ঠী অায়োজন করবে অালোচনা, টক শো’র। অায়োজন করা হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। এদিন অামরা সবাই শ্রমিক অন্তপ্রাণ হয়ে যাব। অাউড়াবো কথার ফুলছড়ি শ্রমিক
অধিকার নিয়ে। কিন্তুু পরের দিন থেকে যে যার স্বার্থসংশ্লিষ্ট অবস্থানে চলে যাব।
বিশ্বের এই যে অাধুনিক রুপ তা কাদের ঘামের ফসল? সন্দেহাতীতভাবে উত্তর একটাই তাহলো শ্রমিকের ঘামের ফসল। কিন্তুু অাজ এই শ্রমিকের অবস্থান কোথায়? অবস্থান সেখানেই যেখানে অতীতেও ছিল। অাজও শ্রমিক নির্যাতিত, নিষ্পেষিত। অাজও শ্রমিক দারিদ্রের করালগ্রাসে জর্জরিত। পাচ্ছে না সে তার ন্যূনতম বেঁচে থাকার
মৌলিক উপকরণগুলো। যা তার প্রাপ্য। পাচ্ছে না তার জীবনের নিরাপত্তা। তাকে মরতে হয় দালানের চাপায় পড়ে না হয় অাগুনে পুড়ে।
স্বাভাবিক মৃত্যুটাও যেন কার কাছে অধরা। বেঁচে থাকার তাগিদে ‘শ্রমিক’ নাম ধারণ করে অার বাড়ী ফিরে দালান চাপা ও অাগুনে পোড়া লাশ হয়ে। ক’দিন হৈচৈ হয়। অাশ্বাস অার অাশ্বাস,
প্রতিশ্রুতি অার প্রতিশ্রুতি অাসতে থাকে। তারপর? তারপর সবাই নিশ্চুপ।
অামরা সবাই ভুলে যাই। ভুলে যায় না শুধু
স্বজনহারা মানুষগুলো।
নিম্নতম মজুরীর কারণে তাদের দিনাতিপাত করতে হয় ক্লায়ক্লেশে। বেঁচে থাকার সাধারণ চাহিদাগুলো পূরন করতে পারে না। তাই করতে হয় মানবেতর জীবনযাপন। যেখানে খাবার ও
মাথাগোছার ঠাঁইয়ের জন্য প্রতিনিয়ত যুদ্ধ
করতে হয়, সেখানে তার সন্তান-সন্ততিদের লেখাপড়া করানোর অাশা করতে পারে না। ফলে শ্রমিকের সন্তানটি শিক্ষা বঞ্চিত হয়ে বেড়ে উঠে অাগামীর শ্রমিক হয়ে। বংশ পরম্পরায় তৈরি হতে থাকে শ্রমিক।
শ্রমিকের অধিকার দেখভাল করার জন্য রয়েছে অাইএলও ( International Labour Organization) সহ বহু অান্তর্জাতিক সংস্থা,
রয়েছে দেশী-বিদেশী এনজিও, রয়েছে দেশী-বিদেশী শ্রমিক সংগঠন। সর্বোপরি রয়েছে শ্রম অাদালত সহ সরকারী দপ্তর সমুহ। শ্রমিকের মাথার উপরে এত অভিভাবক থাকলেও কেন তাদের জীবনধারা বিশ্বব্যাপী অতীতেও যেমন
ছিল অাজও তেমনি রয়েছে? এর উত্তর কি? অাসলে দেখার অর্থে দেখার কেউ নেই। অধিকার কেউ কাউকে দেয় না। কেউ তা ঘরে এসে দিয়ে যায় না। ইহা ঐতিহাসিক সত্য। কোন শ্রেণীকে তার অধিকার নিজেদেরকেই অর্জন করতে হয়।
এটি দান খয়রাতের বিষয় নয়। অতীতেও শ্রমিকের অধিকার বিষয়টি যে তিমিরে ছিল অাজও সে তিমিরেই অাছে।
তাহলে অধিকার অাদায়ের পথ? পথ একটাই তা হলো শ্রমিকদেরকে সচেতন হতে হবে, সংগঠিত হতে হবে। সমস্বরে অাওয়াজ তুলতে হবে। ‘মে দিবস’ এর দিনেই শুধু নয় সারাবছর। তা সে যে
দেশেরই শ্রমিক হোক। কারণ, সবদেশের শ্রমিকের সমস্যা ঐ একটাই তা হলো অধিকার পাওয়া না পাওয়া। বিষয়টি যে শ্রেণীগত।