পরশ মির্জা ঃ অামরা পহেলা বৈশাখে বাংলা নববর্ষ পালন করেছি। বাংলা নববর্ষ বাঙালী জাতির প্রাণের উৎসব। জাতীয় সার্বজনীন সাংস্কৃতিক উৎসব। যা অামরা ধর্ম-বর্ণ গোত্র নির্বিশেষে সবাই মিলে পালন করেছি। বিশ্বের দরবারে অানুষ্ঠানিকভাবে জানান দিয়েছি যে, অামাদের একটি সমৃদ্ধ নিজস্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রয়েছে। রয়েছে স্বতন্ত্র জাতিসত্তা। যে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও জাতিসত্তার বলে অামরা বলিয়ান। যে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও জাতিসত্তা অামাদের অাত্মপরিচয়ের ঠিকানা।
অানুষ্ঠানিকতা কি? অানুষ্ঠানিকতা হলো, যে কোন বিষয়ে শুধুমাত্র জানান দেওয়া। পহেলা বৈশাখে নববর্ষ পালন করে অামরা অানুষ্ঠানিকভাবে শুধুমাত্র তুলে ধরেছি অামাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। তুলে ধরেছি অামাদের নিজস্ব জাতিসত্তা। এই অানুষ্ঠানিকতার পর তা চিন্তা চেতনায় লালন করাই হলো মূল দায়িত্ব। জাতীয় সংস্কৃতি শুধু একদিনের অানুষ্ঠানিকতার বিষয় নয়, প্রতিদিনের বিষয়। নববর্ষের পরে এখন কি অামরা অামাদের নিজস্ব জাতীয় সংস্কৃতিকে বাক্সবন্দী করে রাখবো? সারাবছর কি বিজাতীয় বাণিজ্যিক অপসংস্কৃতির গন্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দিব? নাকি নিজস্ব সংস্কৃতিকে প্রতিদিনের চিন্তা-চেতনায় লালন এবং তা প্রকাশ করে যাব? প্রশ্ন এখানেই। এসব প্রশ্নের উত্তরের মাঝেই নিহিত রয়েছে অামাদের জাতীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের উৎকর্ষতা। যা এগিয়ে নিয়ে যাবে অামাদের সংস্কৃতিকে।
উপরোক্ত প্রশ্নগুলোর উত্তর অতি সহজ। নিজস্ব সংস্কৃতিকে বাক্সবন্দী করার কোন অবকাশ নেই। অবকাশ নেই বিজাতীয় বাণিজ্যিক অপসংস্কৃতির গন্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দেয়ার। প্রতিদিনই নিজস্ব সংস্কৃতিকে অামাদের চিন্তাচেতনায় লালন করতে হবে। বর্জন করতে হবে বিজাতীয় বাণিজ্যিক অপসংস্কৃতি অসুস্থ ধারা। প্রতিদিন নিজস্ব সংস্কৃতি লালনের মাধ্যমেই এগিয়ে যায় একটি জাতির জাতিসত্তার সংস্কৃতি। শুধু একদিনের উৎসবের অানুষ্ঠানিকতায় এগিয়ে যায় না। অানুষ্ঠানিকতার পর ঝিমিয়ে পড়লে সংস্কৃতিও ঝিমিয়ে পড়ে।
পহেলা বৈশাখে পালিত বাংলা নববর্ষের সাংস্কৃতিক উৎসবের প্রেরণায় অামাদের চিন্তাচেতনায় প্রতিদিনই জাগরুক রাখতে হবে নিজস্ব জাতিসত্তার সংস্কৃতি। তাহলেই সমৃদ্ধ হবে অামাদের সংস্কৃতি। বিশ্ব অাকাশে উড়বে বাংলার লালসবুজের সংস্কৃতি। নিজস্ব জাতিসত্তার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সমুন্নত রাখা নাগরিক হিসেবে অামাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব ও কর্তব্য। তাই এ দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে এগিয়ে অাসতে হবে সকলকেই। এই দায়িত্ব ও কর্তব্য এড়িয়ে যাওয়ার কোন অবকাশ নেই। এড়িয়ে গেলে পিছিয়ে পড়বে বাংলা সংস্কৃতি। যা জাতির মানসিক বিকাশে অন্তরায় হিসেবে দেখা দিবে।