পূর্বময় ডেস্কঃ দেশব্যাপী ক্রেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাংলাদেশ হোটেল রেস্টুরেন্ট মিষ্টি বেকারি শ্রমিক ইউনিয়ন (রেজিঃনং-২১২৬) নেত্রকোণা জেলা শাখা হোটেল রেস্টুরেন্ট মিষ্টি বেকারি শ্রমিক ইউনিয়নের উদ্যোগে জেলা প্রশাসক, নেত্রকোণা বরাবর আজ স্মারকলিপি প্রদান করা হয় । স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয় যে, এদেশের সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত-নিপীড়িত অবহেলিত হোটেল সেক্টরের শ্রমিক যাদের কাজের কোন সময় সীমা নেই। কাক ডাকা ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত কাজ করার পরও থাকা-খাওয়ার সুব্যবস্থা নেই। হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করে যে মজুরি পায় তা দিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাতে হয়। এ সেক্টরে শ্রমিকরা পায় না শ্রম আইনের সুযোগ-সুবিধা।
অবহেলিত-বঞ্চিত শ্রমিকদের পক্ষে স্মারকলিপিতে উল্লেখিত ৭ দফা দাবি হচ্ছে –
একজন শ্রমিক কোন রকম বেঁচে থাকতে হলে সকালে নাস্তা ও দুই বেলা খাওয়া খরচ ১২৫/- দৈনিক খোরাকি প্রয়োজন। সরকারি কর্মচারিদের জন্য ৬ সদস্যের পরিবারের এক মাসের খরচ ধরে তাদের বেতন কাঠামো নির্ধারণ করা হয়। সেই হিসাবে সুবিধা বঞ্চিত হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রমী শ্রমিকদের মজুরি বেশি হওয়া উচিত। ৬ জনের পরিবারের খরচ হিসাব করলে মাসে ২২,৫০০/- টাকা দাঁড়ায়। কিন্তু সকল দিক বিবেচনা করে ২০,০০০/ টাকা মূল মজুরি দাবি করছি। ঘরভাড়া সিটি কর্পোরেশন এলাকায় মূল মজুরির ৬০%, জেলা শহরে ৫৫% এবং থানা শহরে ৫০% হারে, চিকিৎসা ভাতা প্রতি মাসে ১,৫০০/- যাতায়াত ভাতা ১,৫০০/- প্রদান করতে হবে। প্রতি বছর প্রত্যেক শ্রমিককে ১৫% হারে ইনক্রিমেন্ট ও বাজার দরের সাথে মজুরি সমন্বয় করতে হবে। প্রত্যেক শ্রমিক পরিবারের জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা পুলিশ প্রশাসনকে দেওয়া রেশনের সমপরিমান রেশনিং-এর ব্যবস্থা চালু করতে হবে। শ্রমিকের ছেলেমেয়েদেরকে শিক্ষার সুযোগ করে দিতে হবে। শ্রমিকদের জন্য উপযুক্ত বাসস্থান নির্মাণ করে পরিবার নিয়ে থাকার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ অনুযায়ী ৫ ধারা মতে নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র, ৬ ধারা মতে সার্ভিস বই, ১০৩ ধারা মতে সপ্তাহে দেড় দিন সাপ্তাহিক ছুটি, ১১৫ ধারা মতে বছরে ১০ দিন নৈমিত্তিক ছুটি, ১৪ দিন অসুস্থতাজনিত ছুটি, ১১৭ ধারা মতে প্রতি ১৪ দিন কাজের জন্য একদিন অর্জিত ছুটি, ১১৮ ধারা মতে ১১ দিনের মজুরিসহ উৎসব ছুটি প্রদান করতে হবে। একই সাথে শ্রমঘন এলাকায় শ্রম আদালত গঠন করে ৯০ দিনের মধ্যে মামলা নিস্পত্তি করতে হবে।
২৬ ধারা মতে চাকুরীর অবসান জনিত কারণের জন্য ৪ মাসের নোটিশ পে, প্রতি বছর কাজের জন্য ১ মাসের ক্ষতিপূরণ বা গ্রাচ্যুইটি প্রদান করতে হবে। ১০৮ ধারা মতে দৈনিক ৮ ঘন্টা, সপ্তাহে ৪৮ ঘন্টার অতিরিক্ত কাজের জন্য দ্বিগুণ মজুরি দিতে হবে। প্রতি বছর ২ মাসের মূল মজুরির সমপরিমাণ ২টি উৎসব ভাত (বোনাস) প্রদান করতে হবে। বর্তমান শ্রম আইন ২০০৬, অদ্যাবধি সংশোধিত শ্রমিক স্বার্থবিরোধী সকল ধারা বাতিল করে গণতান্ত্রিক শ্রম আইন প্রনয়ণ করতে হবে।
জেলা শাখার আহবায়ক আনোয়ার হোসেন এবং যুগ্ম আহবায়ক লোকমান হোসেন স্বাক্ষরিত এ স্মারকলিপি প্রদান করা হয় । স্মারকলিপি প্রদানের সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের নেত্রকোণার জেলা শাখার উপদেষ্টা মিলন মিয়া, সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান।