পরশ মির্জাঃ ফুলি ম্যাডাম। তল্লাটের সবাই একনামে তাকে চেনে। চরম আধুনিকা। লাস্যময়ী তো বটেই। গায়ের রং ফর্সা। ইদানিং ফর্সা রংটা বেশ চোখে পড়ার মত। তল্লাটের সবাই কানাঘুষা করে। ফুলি ম্যাডাম সারা শরীরে কি যেন মাখে। গায়ের রং ফর্সা হওয়াতে নিজেকে সাদা চামড়ার মানুষের দেশের বংশধর মনে করে ম্যাডাম ফুলি। শংকর রংয়ের দেশে জন্ম হওয়াতে মনে অনেক কষ্ট। মনোকষ্ট লাঘবের জন্য সাদা চামড়ার দেশের ভাষা সংস্কৃতি অনুসরন করার চেষ্টা করেন। শিশু মেয়ে পুশিকে সেভাবে গড়ায় লিপ্ত। ওকে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন পুসি mammy mammy বলে ডাকে।
ম্যাডাম ফুলি আবার সময়জ্ঞানটা ভালো বুঝেন। তালও মেলাতে পারেন বেশ। ফেব্রুয়ারি মাস যখন আসলো তখন ভাবলেন এটা তো ভাষার মাস তাই মেয়েকে বাংলা ডাক শেখাতে হবে। তা না হলে যে মানুষ কানাঘুষা করবে। এমনিতেই তো কত কানাঘুষা করে।
যেই ভাবনা সেই কাজ। ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন। সন্ধ্যা বেলা। ম্যাডাম ফুলি বে-ওয়াচ জাতীয় কি যেন দেখছেন। পুসি অন্যরুমে খেলা করছে। ডাক দিলেন পুসিকে। Mammy mammy বলে দৌড়ে এল পুসি। ম্যাডাম ফুলি পুসিকে বললেন, তুমি আজ থেকে আমাকে mammy mammy বলে ডাকবে না। মা মা বলে ডাকবে। এটা ভাষার মাস। এ মাসে mammy বলে ডাকলে মানুষে পঁচা বলবে। পুসি মাথা দুলে সম্মতি জানায়। পুসি পুরো ফেব্রুয়ারি মাস মা মা বলে ডাকে।
এদিকে ফেব্রুয়ারি মাস ম্যাডাম ফুলির দম বন্ধ হওয়ার অবস্থা হয়েছিল mammy mammy ডাক শুনতে না পেয়ে। ভাষার মাস শেষ হওয়ায় ম্যাডাম ফুলি যেন দম ফিরে পান। পুসিকে ডেকে বললেন, আজ থেকে আমাকে mammy mammy বলে ডাকবে। পুসি বলল, কেন মা? তুমিই তো বললে মা বলে ডাকতে। আর মা শব্দই তো কত সুন্দর! আমি মা বলেই ডাকব। ম্যাডাম ফুলি থমকে যান। পুসিকে বলেন, আরে তখন তো ছিল ভাষার মাস। এজন্য বলেছিলাম। তবুও পুসি বলে, আমি এতকিছু বুঝি না। মা বলেই ডাকব।
ম্যাডাম ফুলি পুসির মা ডাকের প্রতি টান দেখে বিমর্ষ হয়ে পড়েন। তার মান যে যায় যায়। সোসাইটি কি বলবে। এদিকে চোখে ভেসে সাদা চামড়ার মানুষদের মুখচ্ছবি। যাদেরকে ম্যাডাম ফুলি তার বংশধর মনে করেন। আজ তিনি বড্ড বিপাকে। কি যে করবেন। মেয়ে যে বেঁকে বসেছে।