পূর্বময় ডেস্কঃ
আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দুই ভাইস চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন না দেয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসায় আজ থেকে তিন পদেই ‘প্রার্থী ফরম’ বিক্রি করবে দলটি। তৃণমূল থেকে পাঠানো তালিকায় থাকা মনোনয়নপ্রত্যাশীরাই কেবল সংগ্রহ করবে এই দলীয় প্রার্থী ‘বাছাইপত্র’। এ তালিকায় নাম না থাকলেও কেন্দ্রের বিশেষ
সুপারিশে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের সুযোগ থাকছে। তবে জেলা-উপজেলা থেকে পাঠানো তালিকা (সর্বোচ্চ তিনজন) ও দলের জরিপ রিপোর্টের ভিত্তিতেই মূলত নৌকার প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে। এক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে বর্তমান চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান এবং জাতীয় নির্বাচনে সংসদ সদস্য (এমপি) পদে মনোনয়নবঞ্চিত ত্যাগী ও জনপ্রিয় নেতারা।
আওয়ামী লীগের একাধিক নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে এসব তথ্য। তারা আরও জানান, মন্ত্রিসভাসহ সরকার ও দলের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুনদের প্রাধান্য দিলেও স্থানীয় সরকার পর্যায়ে অভিজ্ঞদেরই অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। গত ১০ বছরের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। শুধু তাই নয়, পুরনোদের প্রার্থী করা হলে মনোনয়নকে কেন্দ্র করে দলীয় কোন্দল অনেকাংশে কমে আসবে বলেও মনে করছেন দলটির নীতিনির্ধারকদের অনেকেই।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, শুধু তৃণমূলের নেতাকর্মীদের রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে মনোনয়ন দেয়া হবে না। এখানে সার্ভে রিপোর্টও দেখা হবে। অনেক যাচাই-বাছাই করে মনোনয়ন দেয়া হবে। তবে আমাদের দলের দীর্ঘদিনের ত্যাগী পরীক্ষিত নেতাকর্মী অগ্রাধিকার পাবে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও দলটির স্থানীয় মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য জাহাঙ্গীর কবীর নানক বলেন, যারা উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন এবং উপজেলা চেয়ারম্যান হওয়ার কারণে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চেয়ে পাননি- এমন নেতারা অগ্রাধিকার পাবেন।
এদিকে নানা নাটকীয়তার পর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রির ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এই দুই পদে দলটি উন্মুক্ত নির্বাচন করতে তৃণমূলে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেয়া হয়েছিল। সোমবার গণমাধ্যমে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ফের দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের আহ্বান জানানো হয়েছে।
১৫ জানুয়ারি উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে একক অথবা সমঝোতা না হলে প্রতি পদে তিনজনের নামের তালিকা কেন্দ্রে পাঠাতে চিঠি ইস্যু করে আওয়ামী লীগ। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্বাক্ষরিত ওই চিঠির নির্দেশ মোতাবেক তালিকা প্রস্তুত করে অধিকাংশ জেলা তাদের প্রার্থী তালিকা কেন্দ্রে পাঠায়।
সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ৩০ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নির্দেশনামূলক একটি চিঠি তৃণমূলে পাঠান। চিঠিতে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী দেয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
দলের দফতর থেকে পাঠানো ওই বিবৃতিতে ওবায়দুল কাদের আরও জানান, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও দলটির স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশনা মোতাবেক আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী মনোনয়ন দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড। তবে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দেবে না মনোনয়ন বোর্ড।
কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের এ নির্দেশনা বাস্তবায়নের কাজ শেষ না হতেই দলের তৃণমূলে আরেকটি নির্দেশনা দেয়া হয়। সোমবার গণমাধ্যমের কাছে পাঠানো আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়- উপজেলা চেয়ারম্যান এবং উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মঙ্গলবার (আজ) সকাল ১০টা থেকে বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টার মধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
উপজেলা পরিষদ (সংশোধন) আইনের ১৬ (ক) ধারা ৮ এর বিধানে বলা হয়েছে- ‘কোনো উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য কোনো ব্যক্তিকে কোনো রাজনৈতিক দল কর্তৃক মনোনীত বা স্বতন্ত্র প্রার্থী হইতে হইবে।’
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের কয়েকজন নেতা জানান, সারা দেশে ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতার সংখ্যাধিক্যের জন্য নির্বাচন উন্মুক্ত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এছাড়া দলীয় মনোনয়ন দিলে বঞ্চিতরা ক্ষোভ ও হতাশায় বিদ্রোহী প্রার্থী হতে পারে, দলে বিশৃঙ্খলার শঙ্কা সৃষ্টি হতে পারে। কোনোরকম ঝামেলা এড়াতে আওয়ামী লীগ এই দুই পদে উন্মুক্ত নির্বাচনের পক্ষে সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু চেয়ারম্যান পদে দলীয় এবং ভাইস চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রার্থী না দেয়া হলে আইনি জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে- এমন শঙ্কা থেকেই মূলত তিন পদেই দলীয় মনোনয়ন দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় আওয়ামী লীগ।
শুধু উপজেলা চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের কথা জানিয়ে ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দবিরুল ইসলাম সোমবার বলেন, প্রথম দিকে কেন্দ্র থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী বাছাই করে পাঠাতে চিঠি দেয়া হয়।
পরে জানানো হয়- শুধু উপজেলা চেয়ারম্যান পদে একক অথবা তিনজন প্রার্থীর তালিকা কেন্দ্রে পাঠাতে। আমরা তালিকা প্রস্তুত করেছি। তবে কেন্দ্র সর্বশেষ যে সিদ্ধান্ত দেবে সেটিই আমরা বাস্তবায়ন করব।
পুরনোদের দিয়েই তালিকা করার কথা জানিয়ে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ সালাম জানান, পুরনো চেয়ারম্যানরা অভিজ্ঞ, তাদের মনোনয়ন দিলে গ্রুপিং হবে না। অন্যদিকে নতুন করে চেয়ারম্যান পদে কাউকে মনোনয়ন দিতে গেলে কোন্দল চাঙ্গা হয়ে উঠতে পারে। এ কারণেই পুরনোদের ওপর আস্থা রাখা হচ্ছে।
এদিকে রোববার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী প্রথম ধাপের নির্বাচনে ৮৭টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ।